• July 8, 2024

রেলস্টেশনের কুলি থেকে ড্রাইভার আবেদ আলী, কোটি কোটি টাকার মালিক

রেলস্টেশনের কুলি থেকে ড্রাইভার আবেদ আলী, কোটি কোটি টাকার মালিক
Please follow and like us:
0
fb-share-icon20
Tweet 20

আজকের পত্রিকাঃ পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। বাড়ি মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঢাকায় চলে যান। এরপর জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন। প্রথমে কুলির কাজ করেন। এরপর রিকশা চালানো, হোটেলে কাজ, চাল বিক্রি করাসহ যখন যে কাজ পেয়েছেন, তা-ই করেছেন। এরপর ড্রাইভিং শিখে পিএসসিতে চাকরি পাওয়ার পরই তাঁর ভাগ্য খুলতে থাকে। বর্তমানে তিনি বিপুল সম্পত্তির মালিক। ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেতিনতলা বাড়ি, বাড়ির পাশে একটি পাকা মসজিদ ও বাগান। কিনেছেন বহু ফসলি জমি।

সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত সৈয়দ আব্দুর রহমানের ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী। তাঁরা তিন ভাই ও এক বোন। ছোটবেলায় বাবা মারা যান। মা অনেক কষ্টে সংসার চালান। মানুষের জমিতে ধান কুড়িয়েও তা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কোরবানির ঈদের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস কুড়িয়ে বিক্রি করতেন সৈয়দ আবেদ আলী।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অভাবের কারণে পড়াশোনা বাদ দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য ঢাকায় চলে যান। কুলির কাজ করেন। বহু রাত রেলস্টেশনে ঘুমিয়েছেন। এরপর হোটেলে খাবারের প্লেট ধোয়ার কাজ, রিকশা চালানো, চাল বিক্রিসহ যখন যে কাজ পেয়েছেন, করেছেন। রাতে কখনো কখনো ফুটপাতেও ঘুমিয়েছেন। এভাবেই তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর বড় ভাই জবেদ আলী কৃষক। এক বছর হলো এক ছেলেকে ইতালি পাঠিয়েছেন। মেজ ভাই আবেদ আলী। ছোট সাবেদ আলী। তিনিও দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে এসে ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ মাস পার হলেও ছেলে ইতালি যেতে পারেননি, লিবিয়াতেই আছেন। ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের পৈতৃক ভিটায় একতলা ভবনে এই দুই ভাই থাকেন। সবার বড় বোন মহরজান। তিনি শ্বশুরবাড়িতে।

সৈয়দ আবেদ আলী পৈতৃক ভিটা থেকে বেশ দূরে জমি কিনে তিনতলা দৃষ্টিনন্দন বাড়ি বানিয়েছেন। বর্তমানে বাড়িটির রঙের কাজ চলছে। বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন সৈয়দ আবেদ আলী কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ। পাশেই ফলদ ও বনজ বিভিন্ন গাছের ছোট্ট একটি বাগান। এ ছাড়া নিজ নামে, স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়িসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে বহু জমি কিনেছেন।

বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে পড়িয়েছেন ভারতে। সিয়াম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। ছোট ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করেন। ঢাকায় বাড়ি ও দামি গাড়ি আছে। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকাতেই। মাসে দু-একবার গ্রামের বাড়ি আসেন। দীর্ঘদিন ধরে ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছেন।

\"গ্রামেগ্রামে জায়গা কিনে তিন তলা বাড়ি করেছেন জাবেদ আলী। ছবি: আজকের পত্রিকাবাড়িতে এসে গ্রামের গরিব মানুষকে নানা সহযোগিতা করেন আবেদ আলী। এবার কোরবানির ঈদে ১০০ মানুষকে এক কেজি করে মাংস বিলি করেছেন। তাই গ্রামের মানুষ তাঁকে অনেক পছন্দ করেন। তাঁরা সৈয়দ আবেদ আলীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানতে পারছেন না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৈয়দ আবেদ আলী রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করেন। পরে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ডাসার উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামেও তাঁর জমি আছে। কয়েক মাস আগেও এলাকার মানুষ তাঁকে তেমন একটা চিনতেন না। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়ামও দামি গাড়ি ব্যবহার করেন।

আজ সোমবার সৈয়দ আবেদ আলীর গ্রামের বাড়িতে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় মিন্টু সরদার বলেন, ‘আবেদ আমার কাছ থেকে ২৬ শতাংশ জমি কিনেছেন। প্রায় এক বছর আগে আমি তাঁর কাছে এই জমি বিক্রি করেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, আবেদ আলী গ্রামে বহু ফসলি জমি কিনেছেন। নিজের নামে, স্ত্রী, সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও কিনেছেন। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।

প্রতিবেশী আব্দুর রহিম মাতুব্বর বলেন, আবেদ আলী অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি কুলির কাজ, হোটেলে কাজ, রিকশা চালানো, চাল বিক্রিসহ নানা কাজ করেছেন। ফুটপাতেও থেকেছেন। গাড়ি চালানো শিখে তিনি ড্রাইভারের চাকরি করেছেন। ধাপে ধাপে ধনী হয়েছেন। বর্তমানে গাড়ির ব্যবসা, হাউজিং ব্যবসা, জমির ব্যবসাসহ নানা ধরনের ব্যবসা করেন। ব্যবসা করেই তিনি বড়লোক হয়েছেন। ছোটবেলায় বাবা মারা গেছেন। মা অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। টাকার অভাবে তিনি পড়াশোনাও করতে পারেননি।

ডাসার বালীগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সেলিম ফকির বলেন, সৈয়দ আবেদ আলী অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি অনেক কষ্ট করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এলাকার মানুষদের অনেক সহযোগিতা করেন। তাঁর এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করব।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ বলেন, পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের সম্পত্তির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
0
fb-share-icon20
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *